হবিগঞ্জ জেলার নবীগঞ্জ, বাহুবল, চুনারুঘাট ও মাধবপুর উপজেলার একটি অংশে পাহাড় রয়েছে। এসব এলাকাকে কেন্দ্র করে গড়ে উঠেছে চা, রাবার, লেবু, আনারসসহ বিভিন্ন ধরণের বাগান। সময়ের সাথে পাহাড়ি এলাকায় লোকজনের যাতায়াত বৃদ্ধি পাচ্ছে। আর সংরক্ষিত বনবিট এলাকায় কমছে গভীর অরণ্য। তাতে বন্যপ্রাণীরা হারাচ্ছে আশ্রয়স্থল, দেখা দিচ্ছে খাদ্য সংকট। এতে নানা সময়ে খাদ্যের সন্ধানে বন্যপ্রাণীরা লোকালয়ে বের হচ্ছে। অনেক সময় লোকজনের হাতে মারা পড়ছে এসব প্রাণী।

অনুসন্ধানে জানা গেছে, চুনারুঘাট উপজেলা কালেঙ্গা বন্যপ্রাণী অভয়ারণ্যের আশপাশে গ্রাম-বস্তি এলাকায় লোকজনের বসবাস বৃদ্ধি পাচ্ছে। এ কারণে ধীরে ধীরে বন উজাড় হচ্ছে। কমতে শুরু করেছে গাছপালা। একইভাবে কমছে পশু-পাখির খাদ্য। বন বিভাগের পক্ষ থেকে প্রতি বছর গাছ রোপণ করা হলেও বৃদ্ধি পাচ্ছে না বন্যপ্রাণীর খাবার। এ ছাড়া সাতছড়ি উদ্যানের আশপাশেও বসবাস বাড়ছে। তার সাথে প্রাকৃতিক বন কমছে চা বাগানেও।

গত ২১ এপ্রিল জেলার মাধবপুর উপজেলার কামালপুর থেকে একটি লজ্জাবতী বানর উদ্ধার করেন হবিগঞ্জ বন্যপ্রাণী ব্যবস্থাপনা ও প্রকৃতি সংরক্ষণ বিভাগের ভারপ্রাপ্ত রেঞ্জ কর্মকর্তা তোফায়েল আহমেদ চৌধুরী। তিনি জানান, ১৯ এপ্রিল বানরটি বনাঞ্চল থেকে পথ হারিয়ে লোকালয়ে চলে যায়। কিছু লোক এটির ওপর আক্রমণ করে।

তাৎক্ষণিক কমলপুর গ্রামের শিমুল মিয়া নামে এক তরুণ সেটিকে উদ্ধার করে নিয়ে বাড়িতে রাখেন। পরে খবর পেয়ে উদ্ধার করে আনা হয়েছে।
তিনি আরো জানান, উদ্ধার হওয়া বানরটি এখনও প্রাপ্তবয়স্ক হয়নি। মানুষের আক্রমণে এটি আহত। চিকিৎসা দিয়ে সুস্থ করে সাতছড়ি জাতীয় উদ্যানে অবমুক্ত করা হবে।

জানা গেছে, লজ্জাবতী বানরকে ইন্টারন্যাশনাল ইউনিয়ন ফর কনজারভেশন অব নেচারের (আইইউসিএন) ২০২০ সালের তালিকায় সংকটাপন্ন (রেড লিস্ট) প্রজাতি হিসেবে দেখানো হয়েছে। এটি আকারে ছোট, বেঙ্গল স্লো লরিস নামে পরিচিত।

স্তন্যপায়ী শ্রেণীর লরিসিডি পরিবারের সদস্য এই বানর বাংলাদেশের বন্যপ্রাণী আইনের তফসিল-১ অনুসারে সংরক্ষিত প্রাণী। এই বানর দিনের বেলায় গাছের উঁচু ডালে নিজেদের আড়াল করে উল্টো হয়ে ঝুলে থাকে। এটি কচি পাতা, পোকা-মাকড়, পাখির ডিম খেয়ে থাকে।

বাংলাদেশ পরিবেশ আন্দোলন (বাপা) হবিগঞ্জ জেলা সাধারণ সম্পাদক তোফাজ্জল সোহেল বলেন, পরিবেশ রক্ষায় বন্যপ্রাণীর বিরাট ভূমিকা রয়েছে। তাই বনে খাদ্য বাড়াতে হবে। তাহলে আর লোকালয়ে বের হবে না বন্যপ্রাণী।